বুধবার, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
Google search engine
Homeশিক্ষারাবির পোষ্য কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন: বৈষম্যের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান

রাবির পোষ্য কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন: বৈষম্যের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আমরণ অনশনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে এ অনশন কর্মসূচি শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) দ্বিতীয় দিনে গড়িয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, পোষ্য কোটার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ায় বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা বহাল রাখা হচ্ছে, যা শিক্ষার মৌলিক নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

পোষ্য কোটা কেন বিতর্কিত?

শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, পোষ্য কোটা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার চেষ্টা। তারা মনে করেন, কোটার এধরনের ব্যবস্থার মাধ্যমে মেধার মূল্যায়ন কমে যাচ্ছে এবং তা সামাজিক ও শিক্ষাগত ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।

“আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে। এখনো যদি কোটার মতো বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা বহাল থাকে, তাহলে আমাদের আন্দোলনের সার্থকতা কোথায়?” এমন প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্যতম মারুফ হাসান।

আন্দোলনের বর্তমান অবস্থা

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আল শাহরিয়া শুভ নামে একজন অসুস্থ হয়ে পড়লেও আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। শিক্ষার্থীরা সাফ জানিয়েছেন, পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি চলবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থান

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান জানান, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই আলোচনা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বক্তব্য বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের কাছে পৌঁছানো হবে এবং বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসার চেষ্টা চলছে।

পোষ্য কোটা এবং সাম্প্রতিক পরিবর্তন

এ বছর রাবি প্রশাসন মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি কোটা বাতিল করে শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য কোটা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে পোষ্য কোটা ১ শতাংশ কমিয়ে ৩ শতাংশে রাখা হয়েছে, যা এখনও বিতর্কিত রয়ে গেছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং খেলোয়াড় কোটার ক্ষেত্রে আগের নিয়ম বহাল রাখা হয়েছে।

কোটা বাতিলের যৌক্তিকতা: শিক্ষার্থীদের মতামত

শিক্ষার্থীদের মতে, মেধার ভিত্তিতে ভর্তি প্রক্রিয়া পরিচালিত হওয়া উচিত। পোষ্য কোটার মতো ব্যবস্থা সামাজিক বৈষম্য তৈরি করে এবং মেধাবীদের সুযোগ কমিয়ে দেয়।

“বিশ্ববিদ্যালয় হলো মেধার জগৎ। এখানে পরিবার বা পোষ্য কোটার জায়গা নেই। পোষ্য কোটার মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে,” বলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিকোণ

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ায় কোটার প্রভাব নিয়ে বিতর্ক বহুদিনের। শিক্ষাবিদদের মতে, কোটাগুলোর পুনর্মূল্যায়ন জরুরি, বিশেষ করে যেখানে মেধার বিষয়টি প্রাধান্য পাওয়ার কথা। তবে তারা আরও মনে করেন, সামাজিক সাম্যতা বজায় রাখতে কিছু বিশেষ কোটার প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে।

শেষ কথা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পোষ্য কোটাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এই আন্দোলন শিক্ষার্থীদের মেধা এবং সমতার অধিকার নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। পোষ্য কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত কি হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে এ ঘটনাটি শিক্ষার ক্ষেত্রে ন্যায্যতার প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায় হয়ে থাকবে।

শিক্ষার জন্য লড়াই করুন, মেধার মূল্য দিন—এটাই শিক্ষার্থীদের বার্তা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments