সরকার এবার হবিগঞ্জ থেকে ১০ হাজার টনেরও বেশি ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। জেলার ৯ উপজেলায় উৎপাদিত আমন ধান এবং চাল সংগ্রহের এই উদ্যোগ কৃষক ও স্থানীয় অর্থনীতিতে কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
হবিগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা চাই থোয়াই প্রু মার্মা জানিয়েছেন, এ বছর সরকার ধানের মূল্য নির্ধারণ করেছে প্রতি কেজি ৩৩ টাকা। সেদ্ধ চালের দাম ধরা হয়েছে প্রতি কেজি ৪৭ টাকা, আর আতপ চালের দাম ৪৬ টাকা।
হবিগঞ্জের ৮৮ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নূরে আলম সিদ্দিকী জানিয়েছেন, এবার সম্ভাব্য ধান উৎপাদন ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৬৩৯ টন, যা থেকে চাল পাওয়া যাবে ২ লাখ ৫১ হাজার ৯৩ টন।
প্রতিশ্রুতিশীল উৎপাদন: সরকারের সংগ্রহ পরিকল্পনা
সরকারের সংগ্রহ পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে, হবিগঞ্জ থেকে ৩ হাজার ৪৯৯ টন ধান এবং ৩ হাজার ২৪৯ টন সেদ্ধ চাল ও ৩ হাজার ৫৭২ কেজি আতপ চাল কেনা হবে। এই উদ্যোগ কৃষকদের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সরকারের এই উদ্যোগ সরাসরি কৃষকদের উপকার করবে। তবে, অনেক কৃষকই মনে করেন, সরকারি সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় যদি মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমানো যায়, তবে তারা আরও বেশি লাভবান হবেন।
বাজার পরিস্থিতি ও কৃষকের প্রত্যাশা
এ বছর সার্বিক আবহাওয়া ও কৃষি উপকরণের সহজলভ্যতা ধান উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে বাজারে ধানের বাণিজ্যিক মূল্য নিয়ে কৃষকরা এখনও কিছুটা শঙ্কিত। সরকারি সংগ্রহের মূল্য তাদের জন্য আশার আলো হলেও বাজারের বাকি অংশ কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তা নির্ধারণ করবে তাদের প্রকৃত লাভ।
সরকারি মূল্যের তুলনায় বেসরকারি বাজারে ধানের দাম অনেক সময় কম থাকে। এ কারণে সরকার নির্ধারিত সংগ্রহের হার ও প্রক্রিয়া সময়মতো কার্যকর হলে কৃষকেরা ক্ষতির শিকার হবেন না।
কৃষি অর্থনীতি ও সম্ভাবনা
সরকারি সংগ্রহের এই উদ্যোগ জেলার অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি প্রধান ভিত্তি। হবিগঞ্জের মতো জেলাগুলোতে ধান উৎপাদন শুধু খাদ্য নিরাপত্তাই নয়, স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙা করতেও বড় ভূমিকা পালন করে।
নূরে আলম সিদ্দিকীর মতে, “সরকারি সংগ্রহ প্রক্রিয়া সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে ধানের বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে।” তবে স্থানীয় কৃষকদের দাবি, সংগ্রহ কার্যক্রম যেন স্বচ্ছ ও সময়মতো হয়।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাব্য সমাধান
সরকারি সংগ্রহ প্রক্রিয়া নিয়ে সাধারণত অভিযোগ থাকে মধ্যস্বত্বভোগীদের সক্রিয়তা এবং কৃষকদের সরাসরি সুযোগ না পাওয়ার বিষয়টি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় টেকসই উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।
সরকারি সংগ্রহ কেন্দ্রগুলোর সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা উচিত এবং প্রতিটি প্রক্রিয়া ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা উচিত। এতে স্বচ্ছতা যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি কৃষকেরাও তাদের ফসলের প্রকৃত মূল্য পাবেন।
উপসংহার: কৃষির সম্ভাবনায় আলোকিত হবিগঞ্জ
সরকারের এই উদ্যোগ শুধু ধান ও চাল সংগ্রহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি কৃষির প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতির একটি প্রতিফলন। সঠিক পরিকল্পনা ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে হবিগঞ্জের কৃষকরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি জাতীয় অর্থনীতিও আরও শক্তিশালী হবে।
সরকারি নীতিমালা যদি কৃষকদের জন্য সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তবে হবিগঞ্জের এই কৃষি-প্রতিশ্রুতি দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার একটি মাইলফলক হতে পারে।