দেশের পুঁজিবাজারে সূচকের বড় উত্থান বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আশা জাগিয়েছে। সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) উভয় বাজারেই উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। তবে লেনদেনের পরিমাণ দুই বাজারে ছিল ভিন্নধর্মী—ডিএসইতে সামান্য কমলেও সিএসইতে বেড়েছে।
ডিএসইতে সূচকের দৃঢ়তা
মঙ্গলবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১৮ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ১৭ পয়েন্টে পৌঁছেছে, যা সাম্প্রতিককালে উল্লেখযোগ্য উন্নতি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উত্থান বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াচ্ছে। তবে সূচকের এই উন্নতির মধ্যে কিছু সূচকে হ্রাসও লক্ষ্য করা গেছে। যেমন, শরিয়াহ সূচক ২৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১১৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৫২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৫৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
ডিএসইতে এদিন মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৪৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, যা আগের দিনের তুলনায় প্রায় ১১ কোটি টাকা কম।
উন্নতিতে এগিয়ে থাকা কোম্পানিগুলো
ডিএসইতে মঙ্গলবার মোট ৩৯৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩১২টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে, যা বাজারে ইতিবাচক সুরের ইঙ্গিত দেয়। এদিন লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানি ছিল:
- ব্র্যাক ব্যাংক
- গ্রামীণফোন
- ইসলামী ব্যাংক
- ফারইস্ট নিটিং
- একমি লিমিটেড
- ইবনে সিনা
- লাভেলো আইসক্রিম
- মতিন স্পিনিং
- স্কয়ার ফার্মা
- খান ব্রাদার্স
সিএসইতে লেনদেনের উল্লম্ফন
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) ইতিবাচক ধারায় লেনদেন হয়েছে। সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৯৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৪ হাজার ১৭ পয়েন্টে।
সিএসইতে এদিন মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ৮ লাখ টাকা, যা আগের দিনের তুলনায় প্রায় ৭ কোটি টাকা বেশি। এদিন ১৮০টি কোম্পানির মধ্যে ১০২টির শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ৫৬টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২২টি কোম্পানির শেয়ার।
উত্থানের পেছনের কারণ
বিশ্লেষকদের মতে, পুঁজিবাজারের এই উত্থানের পেছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে:
- নীতিগত স্থিতিশীলতা: সাম্প্রতিক সময়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিভিন্ন উদ্যোগ বাজারে আস্থা বাড়িয়েছে।
- বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বৃদ্ধি: বিনিয়োগকারীরা বিশেষ করে ব্যাংকিং ও ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে শেয়ার কেনায় বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
- বিশ্ববাজারের ইতিবাচক প্রভাব: আন্তর্জাতিক বাজারের গতিধারা এবং স্থিতিশীল মুদ্রানীতি দেশীয় বাজারেও প্রভাব ফেলেছে।
বিনিয়োগকারীদের জন্য বার্তা
বাজারের এই উন্নতি বিনিয়োগকারীদের জন্য আশার আলো। তবে বাজারে টিকে থাকার জন্য দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি রাখা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারের বর্তমান ইতিবাচক পরিস্থিতি হলেও বিনিয়োগের আগে সঠিক গবেষণা এবং ঝুঁকি বিশ্লেষণ অপরিহার্য।
পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক উত্থান কেবল একটি ভালো সূচনা; বাজারকে আরও স্থিতিশীল করতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখা এবং নীতিগত স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরি।