ডিম, সবজি, পেঁয়াজ ও চালের পর এবার ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধিতে নতুন চাপের মুখে পড়েছে সাধারণ ভোক্তারা। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ যারা রান্নার জন্য খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের ওপর নির্ভরশীল, তারা সবচেয়ে বেশি বিপাকে।
গত এক মাসে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম লিটারে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেলের লিটার ১৭২ টাকা এবং পাম তেলের লিটার ১৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার এখন ১৬৭ টাকা থাকলেও, অনেক দোকানে তা ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অস্বাভাবিক বাজারচিত্র:
দাম বৃদ্ধির ফলে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেখানে বোতলজাত সয়াবিন তেলের চেয়ে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেশি। এমন পরিস্থিতিতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বোতলজাত তেল ড্রামে ঢেলে খোলা তেল হিসেবে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, খোলা তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে কোম্পানিগুলো বোতলজাত তেলের সরবরাহ সীমিত করেছে। এতে বোতলের তেলের দাম বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
পাইকারি ও খুচরা বাজারের চিত্র
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, তেল কেনার খরচ বেড়ে যাওয়ায় তারা আগের মতো ছাড় দিতে পারছেন না। পাইকারি পর্যায়েও সংকটের কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকান সোনালী ট্রেডার্সের বিক্রেতা নাঈমুল ইসলাম জানান, কোম্পানিগুলো তেলের অর্ডার কম সরবরাহ করছে। একই বাজারের আরেক বিক্রেতা বলেন, “আমদানিকারকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পাম তেলের দাম বেড়েছে। এজন্য আমদানি করতে সমস্যা হচ্ছে।”
আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব
বিশ্ববাজারে পাম তেলের অন্যতম সরবরাহকারী দেশ মালয়েশিয়ায় মজুদ কমে যাওয়ার খবরে দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পাম তেলের সংকট সয়াবিন তেলের বাজারেও প্রভাব ফেলছে।
বাংলাদেশ গ্রোসারি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন খান জানান, ডলার সংকট, আমদানি জটিলতা এবং আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতা এ পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
সরকারের উদ্যোগ
দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার পাম ও সয়াবিন তেলের উপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করেছে। উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ে এই কর পুরোপুরি মওকুফ করা হয়েছে। তবে এর প্রভাব এখনও বাজারে পুরোপুরি পড়েনি।
ভোক্তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ
টিসিবি বলছে, গত এক মাসে খোলা তেলের দাম ১৭-১৮ টাকা বেড়েছে। পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে প্রতিদিনই নতুন দামে তেল কিনতে হচ্ছে। ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ এই সংকটের প্রধান ভুক্তভোগী।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে কড়া নজরদারি এবং ভোক্তাদের স্বার্থরক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। নইলে এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির প্রভাব নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্যের উপরও পড়তে পারে।