বাংলাদেশ থেকে পর্তুগালে প্রবাসীদের সংখ্যা বর্তমানে ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে, কিন্তু এখনও দেশে নেই কোনো পর্তুগাল দূতাবাস বা কনস্যুলার অফিস। এর ফলে প্রবাসীদের ভিসা এবং কনস্যুলার সেবার জন্য প্রতিবেশী দেশ বা দূরবর্তী কনস্যুলার সেন্টারে যেতে হচ্ছে। দীর্ঘদিনের এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশে একটি পর্তুগাল দূতাবাস স্থাপনের দাবি তুলেছেন প্রবাসীরা।
দূতাবাস না থাকায় প্রবাসীদের দুর্ভোগ
বাংলাদেশ থেকে পর্তুগালে সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় ভ্রমণ ব্যয় এবং সময় উভয়ই বেড়ে গেছে। বিশেষ করে প্রবাসীদের পরিবার এবং ব্যবসায়িক অংশীদারদের ভিসা সংক্রান্ত কাজে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়।
পর্তুগাল বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি রনি মোহাম্মদ বলেন, “তিনবার উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে দূতাবাস স্থাপনের বিষয়ে, কিন্তু কোনো কার্যকর ফলাফল পাওয়া যায়নি। এটি নিয়ে আমরা হতাশ। অন্তত একটি কনস্যুলার অফিস হলেও প্রাথমিক সেবা নিশ্চিত হতো।”
ড. ইউনূসের প্রতি আহ্বান
লিসবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা নোবেল বিজয়ী এবং আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বিশেষভাবে এই দাবি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের আয়োজক গ্রিন সিলেট ট্রাভেলসের মালিক আব্দুল হাকিম মিনহাজ বলেন, “ড. ইউনূস কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে পদক্ষেপ নিলে দূতাবাস স্থাপন অনেক সহজ হবে। এটি শুধু প্রবাসীদের জন্য নয়, বাংলাদেশ-পর্তুগালের বাণিজ্য সম্পর্ককেও সমৃদ্ধ করবে।”
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, “পর্তুগালে রপ্তানি বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াতে দূতাবাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু প্রবাসীদের জন্য নয়, আমাদের দেশের অর্থনীতির জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
একযোগে প্রচেষ্টার প্রয়োজন
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, শুধু দাবি জানানো নয়, কমিউনিটির সর্বস্তরের প্রবাসীদের একযোগে কাজ করতে হবে।
পর্তুগাল বাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রাসেল আহম্মেদ বলেন, “আমাদের ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগই পারে এই দাবি বাস্তবায়ন করতে। সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ এবং দাবিগুলো জোরালোভাবে উপস্থাপন করা জরুরি।”
দূতাবাসের গুরুত্ব
বাংলাদেশে পর্তুগালের দূতাবাস স্থাপন হলে:
- প্রবাসীদের ভিসা এবং কনস্যুলার সেবা সহজ হবে।
- বাংলাদেশ-পর্তুগালের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।
- পর্তুগালে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের প্রবেশাধিকার বাড়বে।
- প্রবাসীদের হয়রানি কমে আসবে।
আগামী কর্মসূচি
প্রবাসীরা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এই দাবিগুলো বাস্তবায়নে কর্মসূচি পরিচালনা করবেন। এতে প্রবাসী ব্যবসায়ী, সাংবাদিক এবং সাধারণ জনগণ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বক্তারা বলেন, “বাংলাদেশে পর্তুগালের দূতাবাস শুধু প্রবাসীদের স্বার্থ নয়, এটি দুই দেশের সম্পর্ককে আরও উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।”
বাংলাদেশে পর্তুগাল দূতাবাস স্থাপনের এই দীর্ঘদিনের দাবির বাস্তবায়ন কেবল প্রবাসীদের দুর্ভোগ কমাবে না, বরং দুই দেশের মধ্যে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।